মোঃ ইব্রাহীম খলীল।
পোশাক মানুষের ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্যের প্রতীক। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিধান করে, অনেকের অনুকরণে নিজের পোশাক তৈরি করে থাকেন। বৈধ শালিন যেকোনো পোশাক পুরুষেরা পরতে পারবেন। তবে পোশাকের ক্ষেত্রে পুরুষদের খেয়াল রাখতে হবে, যেন তা রেশমের তৈরি করা না হয়।
পোশাক-আশাক ও সাজসজ্জার বিষয়ে সমাজে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও ফ্যাশনের বড় প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যখন যে ফ্যাশন বের হচ্ছে তখন নির্বিচারে অনুকরণকেই ‘আধুনিকতা’ মনে করা হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে অমুসলিম বা ফাসেক লোকদের রীতি-নীতিই অধিক অনুকরণীয় হতে দেখা যায়। এসবই ভুল। বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত। হাদীস শরীফে এসেছে-‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখে সে তাদের দলভুক্ত।’ (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৫৯)
কারণ, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘স্বর্ণ ও রেশমি বস্ত্র আমার উম্মতের নারীদের জন্য বৈধ এবং পুরুষের জন্য হারাম করা হয়েছে।’ (সিলসিলা সহীহা হা/১৮৬৫/৩০৩০)
একবার হুযাইফা রা. এক অগ্নি পুজকের কাছে পানি পান করিতে চাইলেন, অগ্নি পূজক তাকে রূপার গ্লাসে পানি দিলেন। তখন তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা মিহি কিংবা মোটা রেশমী কাপড় পরবে না, সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার করবে না। কারণ এসব দুনিয়াতে তাদের (অর্থাৎ কাফিরদের) জন্য এবং আখিরাতে তোমাদের জন্য। (বুখারি, হাদিস, ৫২২৬)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ‘আলী ইবনে আবু তালিব রা.-কে বলতে শুনেছেন,
‘আল্লাহর নবী-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ডান হাতে রেশম ও বাম হাতে স্বর্ণ নিয়ে বললেন, এ দু’টি জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম।’ (সুনানে আবু দাউদ, অনুচ্ছেদ নারীদের জন্য রেশমি পোশাক বৈধ, সহিহ)
এর পাশাপাশি পুরুষদের নারীদের বেশ ধারণ করে এমন পোশাক পরতেও নিষেধ করেছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী মহিলাদের উপর লানত করেছেন।’- (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৮৮৬)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘যে সব নারী পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, সহীহুল জামে হা/৪৫৩৩, সহীহ)
প্যান্ট-শার্ট প্রথমে এটি ইংরেজদের পোশাক থাকলেও এখন তাদের বিশেষ পোশাক থাকেনি। তাই বিজাতীয় অনুকরণের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি এই পোশাক পরবে তার জন্য নাজায়েয হবে। কিন্তু যদি তাদের অনুকরণের নিয়ত না থাকে তবে তার ক্ষেত্রে এই পোশাক পরলে বিজাতীয় পোশাক পরার গুনাহ হবে না বটে, কিন্তু এরপরও কিছু কারণে এটি অবৈধ পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। যেমন-১. টাখনু গিরার নিচে হওয়া। ২. স্কিন টাইট অর্থাৎ এত আঁটশাট হওয়া যে, সতরের আকৃতি কাপড়ের উপর ফুটে উঠে। হ্যাঁ, প্যান্ট-শার্ট যদি উপরোক্ত খারাবী থেকে মুক্ত হয় এবং বিজাতীয় অনুকরণের উদ্দেশ্য না থাকে তাহলে তা পরিধান করা নাজায়েয হবে না। অবশ্য এরপরও তা পরিধান করা মাকরূহ এবং তা ব্যবহার নাক করাই বাঞ্ছনীয়।-দরসে তিরমিযী ৫/৩৩২; ইসলাহী খুতবাত ৫/২৭৮, ফাতাওয়া নিযামিয়া ১/৪২৩; কেফায়াতুল মুফতী ৯/১৬৮; আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৬৪
টাই যদিও আজকাল মিশ্র পোশাকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে, কিন্তু এর সূচনা ইহুদীদের শূলের প্রতীক হিসাবে হয়েছে বলে বেশ জনশ্রুতি আছে। যেহেতু এ বিষয়টি তথ্যপ্রমাণপুষ্ট নয় আর মিশ্র পোশাক হিসাবেও এর প্রচলন হয়ে পড়েছে তাই মুফতীগণ বলেন, এটা পরা একেবারে নাজায়েয তো হবে না; বরং মাকরূহ হবে। তাই এর ব্যবহার এড়িয়ে চলা কর্তব্য। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১২/৪০৮)